নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল পোস্টে থাকছে, নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে। এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের জানাতেই মূলত আজকের এই আর্টিকেল পোস্ট। অনেকেই আছে যারা এই বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহি। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
আপনি যদি আমাদের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকেন তাহলে, নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনাদের এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাতেই মূলত আজকের এই আর্টিকেল পোস্ট। একজন মুসলমান ব্যক্তি হিসেবে এই বিষয়টি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আপনি যদি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানুন
- নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা
- নামাজের ফজিলত
- নামাজের বরকত
- নামাজের প্রকারভেদ
- নামাজের আরকান
- নামাজের আহকাম
- বেনামাজির শাস্তি
- মৃত্যুর সময় তিনটি শাস্তি
- কবরের মধ্যে তিনটি শাস্তি
- কেয়ামতের তিনটি শাস্তি
- লেখকের শেষ মতামত
নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা
ইসলামের ভিত্তি রয়েছে পাঁচটি এর মধ্যে নামাজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তাই এই পোস্টটিতে নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আলোচিত হয়েছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতালা নামাজের গুরুত্ব এতটাই অধিক করে দিয়েছেন যে, স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম কে নিজের কাছে নিয়ে বান্দার মুক্তির জন্য উপহার স্বরূপ দিয়েছেন নামাজ।
নামাজের মাধ্যমেই বান্দা আল্লাহতালার নৈকট্য লাভ করে থাকে। নামাজ কায়েমের মাধ্যমে পরকালে মুক্তি পেতে পারে। মহান আল্লাহ তা'আলা নিজে সালাত কায়েম করার আদেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহতালা বলেছেন তোমরা সালাত কায়েম করো আর মহান আল্লাহর রশিকে শক্তভাবে ধারণ করো। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মহান আল্লাহতালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার এবাদত বন্দেগী করার জন্য।
মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী এর মাঝে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। ইসলামের বিধি-বিধান গুলো মেনে জীবন যাপন করায় আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। নামাজ বেহেস্তের চাবিকাঠি। সুতরাং দুনিয়া থেকে চাবি তৈরি করে নিয়ে যেতে হবে বেহেস্তের দরজা খোলার জন্য এবং কবরের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেতে আমাদের উচিত নামাজের প্রতি যথাযথভাবে যত্নবান হওয়া।
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য আমাদেরকে নামাজ কায়েম করতে হবে। আশা করছি, এতক্ষণ ধরে আলোচনা করার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পেরেছেন, নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে। এছাড়া নামাজের আরো কিছু বিষয়বস্তু জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন।
নামাজের ফজিলত
নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতালা যেমন, নামাজের গুরুত্ব অধিকতর করে দিয়েছেন। তেমনি করে নামাজের ফজিলতও অপরিসীম করেছেন। নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন শরীফে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা ও অন্যায় কার্য হতে ফিরিয়ে আনে। যে সকল ব্যক্তি ঈমানদার মুমিনগন হয় ও নম্রতার সাথে নামাজ আদায় করে থাকে তারাই মুক্তি লাভ করবে।
যারা সযত্নে নামাজ আদায় করবে তারাই বেহেশতে মর্যাদার অধিকারী হবে। নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যাতে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেছেন, যখন কোন লোক নিয়মিত অজু করে, ভয় ও ভীতি ও শ্রদ্ধার সাথে নামাজ আদায় করে, তার জন্য আল্লাহ পাক জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন এবং রোজ কেয়ামতে ওই নামাজ তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিবেন।
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তার মধ্যস্থিত সময়ের গুনাহ মিটিয়ে দেয়। এক ওয়াক্ত নামাজ হতে অন্য ওয়াক্ত নামাজের মধ্যবর্তী সময় যে গুনাহ হয়। দ্বিতীয়বার নামাজ আদায় করলে তা মাফ হয়ে যায়। আর জুম্মার নামাজ এক জুম্মা হতে অপর জুম্মা পর্যন্ত সময়ের গুনা মিটিয়ে দেয়।
একদা একসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত ও সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। যদি কারো বসবাসকৃত গৃহের অতি নিকট দিয়ে পানির নহর প্রবাহিত হতে থাকে এবং কোন লোক প্রবাহিত নহরে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তবে কি তার শরীরে ময়লা থাকবে ? তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম পাঁচ গোসল করার পর কি কোন প্রকারের ময়লা শরীরে থাকতে পারে ?
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি, ঈমানের সহিত নম্র ভদ্রতার মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করে তাহলে তার গুনা সমূহ দূর হয়ে যায়। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নামাজকে একটি বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন এভাবে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে যে ব্যক্তি তার গুনাহ সমূহ বৃক্ষের পাতা গুলোর মত ঝরে পড়ে।
নামাজের বরকত
নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কের মধ্যে এবারে জানবো নামাজের বরকত বিষয়ে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েমের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা মনের কালিমা দূর করে দেয়। অসৎ কাজকে দূর করে দেয় সৎকাজে উৎসাহিত করে। বিপথগামী হলে বিপদ থেকে রক্ষা করে। আল্লাহতালা নামাজ কায়েম করা ব্যক্তির প্রতি রহমত নাযিল করে। শরীরের রোগ বালাই দূর করে দেয়। শরীরের গুনা সমূহ মাফ করে দেয়। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
ঈমানের সহিত একজন মুসলিম ব্যক্তির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকাল দুটোতে আল্লাহতালা বরকত দান করে থাকেন।পরকালে কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দান করেন। কবরের আজাব থেকে রক্ষা করে। নামাজের মধ্য দিয়েই ইহকালেও কিছু বরকত লাভ করা যায়। যেমন সমাজে ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া মারামারি ইত্যাদি থেকে মানুষকে বিরত থাকার তৌফিক দান করেন।
নামাজ ছাড়া কোন দোয়ায় আল্লাহর দরবারে পৌঁছায় না। যেহেতু আল্লাহ একমাত্র সৃষ্টি কর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা, বিধান দাতা। তো সেই ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কারো কাছে আর কোন কিছু চাওয়ার থাকে না। চাওয়ার জায়গা শুধু একটাই আল্লাহতালা অর্থাৎ নামাজ কায়েম এর মধ্য দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ফলে নামাজে বরকত অনেক বেশি এবং আল্লাহ নামাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন অনেক বেশি।
নামাজ কায়েমের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তা'আলা মানুষকে রুজি রোজগারের বরকত দান করে থাকে। শরীরের রোগবালাই দূর করে দেয় এবং মন থেকে সমস্ত অসৎ কাজকে দূর করে দেয়। ফলে মানুষ সত্য ও নিষ্ঠাবান হয়ে ওঠেন এবং আল্লাহর প্রতি মানুষের ভয়ের সৃষ্টি হয়।
নামাজের প্রকারভেদ
ইসলামিক শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নামাজকে মোট চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা ঃ
১। ফরয৪। নফল
ফরযঃ যে সকল নামাজ পড়ার জন্য মহান আল্লাহতালার নির্দেশ রয়েছে তাকে ফরয নামাজ বলা হয়। ফরয নামাজ আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি ফরযে আইন আরেকটি হলো ফরযে কেফায়া। ফরযে আইন হলো যে সকল নামাজ মহান আল্লাহ তা'আলা সকল ব্যক্তির উপরে বাধ্যতামূলক করেছেন। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ।
আর ফরযে কেফায়া হল গ্রাম বা মহল্লার মধ্য থেকে দুই একজন আদায় করলে তা সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। আর যদি কেউ না পড়ে তাহলে গুনাহ হয়। যেমন জানাযার নামাজ।
ওয়াজিবঃ যে সকল নামাজ পড়ার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতালার নির্দেশ করে থাকলেও ফরয নামাজের মত এত জোরালো নয় এ ধরনের নামাজ কে ওয়াজিব নামাজ বলা হয়ে থাকে। যেমন বেতের নামাজ ও ঈদের নামাজ।
সুন্নাতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে অথবা তার আমলের ওপর নির্ভর করে যে নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে তাকে সুন্নাত নামাজ বলে। সুন্নাত নামাজ আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকে। একটি সুন্নাতে মুকাদ্দাহ এবং অপরটি সুন্নাতে গায়ের মুকাদ্দাহ।
সুন্নাতে মুকাদ্দাহ হল ওই সকল নামাজ যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইস সাল্লাম স্বেচ্ছায় আদায় করেছেন এবং উম্মতের আদায় করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেছেন যেমন- ফজরের দুই রাকাত যোহরের পূর্বেকার সুন্নাত চার রাকাত ও উক্ত নামাজের ফরজ চার রাকাতের শেষে দুই রাকাত এবং এশার নামাজের ফরজ চার রাকাত এর পরবর্তী সুন্নাত দুই রাকাত।
আর সুন্নাতে গায়ের মুকাদ্দাহ হচ্ছে সে সকল নামাজ যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজেও কখনো তরক করেছেন। যেমন আসর নামাজের ফজর চার রাকাতের পূর্বেকার সুন্নাত চার রাকাত আর এশার নামাজের ফজর চার রাকাতের পূর্বের সুন্নাত চার রাকাত।
নফলঃ নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা এই আর্টিকেল পোস্টটির মধ্যে উপরে উল্লেখিত রয়েছে। ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্যান্য সকল নামাজই নফল নামাজ। যেমন- ইশরাকের নামাজ, সালাতুল আওয়াবীন ও তাহাজ্জুদ ইত্যাদি। মনে রাখা ভালো নামাজের মধ্যে অশেষ নেকি অর্জন করা যায়। নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে আপনাকে আরো জানতে হবে নামাজের আরকান সম্পর্কে।
নামাজের আরকান
নামাজের ভেতরের আবশ্যকীয় কাজগুলোকেই নামাজের আরকান বলে। আরকান সাতটি ভাগে বিভক্তঃ নামাজের আরকান গুলো কি জেনে নিন-
১। তাকবীরে তাহরীমা বলা
২। কিয়াম করা
৩। কিরাত পাঠ করা
৪। রুকু করা
৫। সিজদা করা
৬। শেষ বৈঠক
৭। নামাজ ভঙ্গ করা
১। তাকবীরে তাহরীমা বলাঃ শব্দের অর্থ হারাম করে দেওয়া। আল্লাহ আকবর বলে নামাজ আরম্ভ করার সাথে সাথে নির্দিষ্ট দোয়া কালাম ব্যতীত সমস্ত পানাহার, নির্দিষ্ট কাজ সমূহ থেকে হারাম করে দেয়া হয় । এজন্য ইহাকে তাকবীরে তাহরীমা বলা হয়। দুনিয়ার সমস্ত ধ্যান-ধারণা থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু আল্লাহর প্রতি মগ্ন থাকতে হবে।
২। কিয়াম করাঃ কিয়াম অর্থ দাঁড়ানো। দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা আবশ্যক এবং দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু যদি কেউ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে অক্ষম হয়ে থাকে তাহলে সে বসে নামাজ আদায় করতে পারবে এবং বসে থেকে নামাজ আদায় করতে যদি অক্ষম হয় তাহলে সে শুয়ে শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করতে পারবে।
৩। কিরায়াত পাঠ করাঃ নামাজের মধ্যে কোরআন থেকে কিছু অংশ পাঠ করাকে কিরাআত বলে। ছোট তিন আয়াত বা সমপরিমাণ এক আয়াত পাঠ করতে হবে। যদি পাঠ না করা হয় তাহলে পাপ হয়ে থাকে। কেউ যদি ভুলক্রমে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে তবে তার ফরজ আদায় হবে কিন্তু সূরা ফাতেহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে না পড়ার কারণে এটি ওয়াজিব। ফলে নামাজের ফরজ দুই রাকাতে এবং অন্য সব নামাজের প্রত্যেক রাকাতে কেরাত পাঠ করতে হয়।
৪। রুকু করাঃ প্রত্যেক রাকাতে রুকু করা ফরজ। রুকুর সময় দুই হাত হাঁটুর ওপর রেখে মাথা ঝুকিয়ে দিতে হবে যাতে পিঠ এবং মাথা সমান থাকে। হাঁটু খুব শক্ত করে ধরে রাখতে হবে যদি এভাবে কারো রুকু করতে সমস্যা হয় তাহলে তার যেভাবে সুবিধা রুকু আদায় করে নামাজ আদায় করবে।
৫। সিজদা করাঃ প্রত্যেক রাকাতে দুটি করে সিজদা করা ফরজ হাত, কপাল, হাঁটু এবং পা মাটিতে রেখে সিজদা করতে হয়।
৬। শেষ বৈঠকঃ প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পাঠ করা পর্যন্ত সময় ধরে বসে থাকা ফরজ।
৭। নামাজ ভঙ্গ করাঃ শেষ বৈঠকে দরুদ শরীফ দোয়া মাসুরা পাট শেষে যেকোনো কাজের দ্বারা সালাত ভঙ্গ করা ফরজ এটা আবু ইমাম আবু হানিফা রঃ বর্ণিত করেছেন।
নামাজের আহকাম
নামাজের আহকামের মধ্যে রয়েছে মোট সাতটি নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
১। শরীর পবিত্র থাকা
২। পোশাক পবিত্র থাকা
৩। নামাজের স্থান পবিত্র হওয়া
৪। সতর ঢেকে রাখা
৫। নামাজের সময় হওয়া
৬। কেবলা মুখী হওয়া
৭। নামাজের নিয়ত করা
১। শরীর পবিত্র রাখাঃ নামাজের জন্য শরীর পবিত্র রাখা অত্যন্ত আবশ্যক।একজন নামাজী ব্যক্তিকে নামাজের সময় পাক পবিত্র থাকতে হয়। গোসল ফরজ হলে গোসল করে পবিত্র হতে হয়। আবার কখনো অজু করে এছাড়া তাইয়াম্মুম করেও পবিত্র হওয়া যায়। যারা পানি ব্যবহার করে পবিত্র হতে অক্ষম বা পানি পাওয়া না যায় সেই ক্ষেত্রে নামাজি ব্যক্তিরা তাইয়াম্মুম করে পবিত্র হতে পারে।
২। পোশাক পবিত্র থাকাঃ নামাজ আদায়কারী ব্যাক্তি যে পোশাক পরিধান করে থাকে সেই পোশাকটি যেন পবিত্র হয়। তবে যদি পবিত্র পোশাক না থাকে তাহলে সতর ঢাকা পরিমান অপবিত্র পোশাকে নামাজ হবে।
৩। নামাজের স্থান পবিত্র হওয়াঃ একজন নামাজী ব্যক্তি যে স্থানে দাঁড়িয়ে বা বসে কিংবা শুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করবে সেই স্থানটি যেন অবশ্যই পবিত্র হয় নতুবা নামাজ আদায় করা হবে না।
৪। সতর ঢেকে রাখাঃ নামাজ আদায়কারীর ব্যক্তি অবশ্যই সতর ঢেকে রাখতে হবে। যদি সে পুরুষ হয়ে থাকে তাহলে নাভি হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর স্ত্রী লোকের ক্ষেত্রে মুখমণ্ডল হাতের কব্জি এবং পায়ের পাতা ব্যতীত সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয।
৫। নামাজের সময় হওয়াঃ মহান আল্লাহ তায়ালা ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করতে আদেশ করেছেন। নামাজের সময় না হওয়ার আগে নামাজ পড়া জায়েজ নাই। আবার নির্দিষ্ট সময়ে পার করে নামাজ আদায় করাও সঠিক না। তবে বিশেষ কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে সে নামাজ কাজা হিসেবে সাথে সাথে আদায় করতে হবে।
৬। কিবলামুখী হওয়াঃ মুসলমানদের জন্য বায়তুল্লাহ তথা কাবা ঘরকে মহান আল্লাহতালা কেবলা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং আমাদেরকে কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করা ফরজ। তবে যদি কোন অজানা জায়গায় গিয়ে কাবা ঘর কোন দিকে আন্দাজ করতে না পারা যায়। তাহলে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। তারা যদি বলতে না পারে তাহলে, নিজের মন যেদিকে যায় সেদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে হবে।
৭। নামাজের নিয়ত করাঃ নামাজের জন্য নিয়ত মহান আল্লাহতালা ফরজ করে দিয়েছেন। নামাজ আদায় করতে হলে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে নিয়ত মনে মনে করা ফরজ মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। উচ্চারণ করে নিয়ত করা ভালো।
বেনামাজির শাস্তি
নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি জেনে রাখা দরকার বেনামাজির শাস্তি সম্পর্কে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের ওপর নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। আর এই ফরজ কাজটা যদি না করা হয় তাহলে তার জন্য শাস্তিও অবধারিত রয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম না করলে ইহকাল ও পরকাল উভয় জায়গাতেই কঠিন শাস্তি পেতে হবে। বেনামাজির জন্য দুনিয়াতে, মৃত্যুর সময়ে ,কবরের মধ্যে এবং কেয়ামতে শাস্তি বিদ্যমান রয়েছে।
দুনিয়ার ছয়টি শাস্তিঃ
১। জীবন ও জীবিকার বরকত উঠে যাবে
২। চেহারায় নেক বখতির নূর উঠে যাবে
৩। বেনামাজি ব্যক্তির প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে পৌঁছাবে না
৪। বেনামাজির প্রতি মানুষ ও ফেরেশতাগণও ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে
৫। আল্লাহ তাআলার সকল নেয়ামত সমূহ থেকে বঞ্চিত হবে
৬। বেনামাজি ব্যক্তির নেককার কার্যাদি আমলনামায় লেখা হবে না
মৃত্যুর সময় তিনটি শাস্তি
১। ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে
২। অত্যাধিক দুর্দশা গ্রস্থ ও লাঞ্ছিত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে
৩। মৃত্যুর সময় অধিক পিপাসা লাগবে এমন পিপাসা লাগবে যেন, পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের পানি পান করলও তার পিপাসা নিবারণ হবে না।
কবরের মধ্যের তিনটি শাস্তি
১। বেনামাজি মৃত্যুর পর তার কবর এতটাই সংকোচিত হবে যেন তার এক পাঁজর হতে আরেক পাঁজরের হাড় ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
২। আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন ফেরেশতা বলতে থাকবে পৃথিবীতে তো নামাজ আদায় করোনি এখন শাস্তি ভোগ করতে থাকো ফেরেশতাটির হাতে অগ্নির মগুর থাকবে।
৩। তার কবরের ভেতরে একটি সাপ পাঠানো হবে যে সাপ শুজা আকড়া নামীয় আগুনের চক্ষু ও লোহার নখ বিশিষ্ট সম্পন্ন। সাপটিও বলবে ওই ব্যক্তি কে পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় তুমি তো নামাজ পড়ো নি তাই তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। আর সাপের নখ দিয়ে আঘাত করতে থাকবে এ শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।
কেয়ামতের তিনটি শাস্তি
বেনামাজি ব্যক্তির কিয়ামতের শাস্তি কি। আল্লাহতালা বেনামাজি ব্যক্তিকে কিয়ামতে কয়টি শাস্তি প্রদান করবে জেনে নিন-
২। আল্লাহ তাআলা তার হিসাব অতি কড়াকড়ি ভাবে নিবে।
৩। শেষ পর্যন্ত তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তথায় সে দীর্ঘকাল আজাব ভোগ করতে থাকবে যে জীবনের কোন শেষ নেই।
লেখকের শেষ মতামত
আপনি যদি নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেল পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্পর্কে এই আর্টিকেল পোস্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে আপনার এই বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত দরকার।
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামিক আর্টিকেল পোস্ট যদি নিয়মিত পড়তে ও পেতে চান। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। কেননা প্রতি নিয়ত এ ধরনের সুন্দর সুন্দর ইসলামিক আর্টিকেল পোস্ট প্রকাশ করে থাকি।
( নামাজের বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা ) আমার এই আর্টিকেল পোস্টি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে ও বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ !
ডিজিটাল মার্কেটিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্টে রিভিউ করা হয়।
comment url